Breaking




Tuesday 13 July 2021

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ।। Permanent Settlement

 চিরস্থায়ী  বন্দোবস্ত ।। Permanent Settlement 

চিরস্থায়ী  বন্দোবস্ত ।। Permanent Settlement 
নমস্কার বন্ধুগন ,
আজকে আমরা পড়বো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে । চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কি , কবে হয়েছিলো , কোথায় কোথায় হয়েছিলো , এর উদ্দেশ্য কি , এর শর্ত কি ছিল , এর ফলাফল ইত্যাদি বিষয়ে আমরা জানবো । চলুন দেরি না করে পরে নিই চিরস্থায়ী  বন্দোবস্ত সম্পর্কে ।
ভুমিকা 
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত আসলে এটি একধরনের ভুমি - রাজস্ব ব্যবস্থা । লর্ড কর্নওয়ালিস ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা , বিহার , উড়িষ্যায় এই ব্যবস্থা চালু করেন । পরবর্তী কালে পরবর্তীকালে বারানসি , উত্তর - পশ্চিম প্রদেশ ও মাদ্রাস প্রেসিদডেন্সির কোনো কোনো অঞ্চলে চালু করা হয়।
উদ্দেশ্য 
লর্ড কর্নওয়ালিস গভর্নর জেনারেল হয়ে ভারতে এসে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে এক নতুন বন্দোবস্ত চালু করেন যার উদ্দেশ্য হল -
(১) কর্নওয়ালিস ছিলেন ইংল্যান্ডের ভূস্বামী সম্প্রদায় ভুক্ত । তিনি ভারতে এসে অনুরূপ শ্রেনির জমিদার গড়ে তুলার জন্য আগ্রহী ছিলেন।
(২) বছরের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্ধারিত রাজস্ব থেকে কোম্পানির আয়কে সুনিশ্চিত ও নিয়মিত করার প্রয়োজন ছিল ।
(৩) কর্নওয়ালিস চেয়েছিলেন বাংলার জমিদার শ্রেণিকে কোম্পানির শাসনের ক্ষেত্রে সহযোগী শ্রেণিতে পরিনত করতে ।
(৪) শিল্প  ও বানিজ্যের উন্নতির  জন্য কৃষির অগ্রগতির প্রয়োজন , তাই জমিদার গনকে স্থায়ি শর্ত দেওয়ার উদ্দশ্যে চিরস্থায়ী বন্দবস্ত্র চালু করেন ।
(৫) রাজস্ব থেকে প্রতি বছর সুনিশ্চিত আয় হলে সরকারের পক্ষে বার্ষিক আয়ব্যয়ের বাজেট তৈরির কাজ সহজ হবে।
(৬) জমিতে স্থায়ী অধিকার পেয়ে জমিদাররা কৃষি ও কৃষকের উন্নতির জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করবেন। এতে দেশের সমৃদ্ধি বাড়বে এবং পরােক্ষে কোম্পানিরই লাভ হবে।
(৭) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের মাধ্যমে ভারতে ইংরেজদের অনুগামী একটি নতুন অভিজাত শ্রেণির উত্থান ঘটবে।
শর্ত
(১) যে সকল জমিদার বংশানুক্রমিক ভাবে বন্দোবস্ত ভোগ করতে চায় । তাদের নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে সরকারকে রাজস্ব দিতে হবে না হলে তাদের জমিদারী বাজেয়াপ্ত করা হবে ।
(২) উৎপন্ন ফসলের একভাগ বাদ দিয়ে বাকী নয় ভাগ ইজারা বা জমিদারদের ওপর রাজস্ব স্বরূপ ধার্য করা হত ।
(৩) প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলেও কৃষকরা রাজস্ব দিতে বাধ্য থাকত ।
(৪) এই বন্দোবস্তের ফলে জমিদার বিচারের অধিকার দেওয়া হবে না ।
(৫)  জমিদার ইচ্ছামতাে জমি দান, বিক্রি বা বন্ধক রাখতে পারবেন।
(৬) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজস্ব পরিশােধে ব্যর্থ হলে তাকে সমগ্র জমিদারি বা তার অংশ বিক্রি করে সরকারের প্রাপ্য রাজস্ব মেটাতে হবে। অন্যথায় জমিদারি বাজেয়াপ্ত হবে।
ফলাফল
লর্ড কর্নওয়ালিসের প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলাফলকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে । অনেকে গুন তথা সুফল গুলি খুঁজে বেড় করেছেন আবার অনেকে দোষ তথা কুফল গুলি তুলে ধরেছেন । সেই গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল -
সুফল ঃ-   (১) জমি ও প্রজাদের উন্নতি সাধন ঃ- জমিদারদের চিরস্থায়ী ভাবে জমির মালিকানা দান করার ফলে তারা জমি ও প্রজাদের উন্নতি সাধনের প্রেরনা পেয়েছেন ।
(২) বাজেট তৈরির সুবিধা ঃ- কোম্পানির প্রচলিত বাজেট সুনিশ্চিত আয় না থাকার ফলে কোম্পানির তার বানিজ্যিক বিনিয়োগের মূলধন সংগ্রহ করতে অক্ষম ছিল , যার ফলে সমস্যার সমাধান ঘটে ছিল এই চিরস্থায়ী ব্যাবস্থ্যায় ।
(৩) আবাধি জমির পরিমান বৃদ্ধি ঃ- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষির উন্নতির দিকে জমিদার নজর দিলে বেশকিছু অনাবাগি জমি আবাধি জমিতে পরিনত হয় ।
(৪) সুনির্দিষ্ট আয়ঃ- এই বন্দোবস্তের ফলে জমিদারদের অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়। সরকারের নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি সুনিশ্চিত হয়। ফলে সরকারের পক্ষে বার্ষিক আয়ব্যয়ের বাজেট তৈরি সহজ হয়।
কুফল ঃ-  (১) চরাহারে খাজনা আদায়ঃ- এই বন্দোবস্তের রাজস্বের পরিমাণ জমি জরিফ করে নির্ধারণ করা হত না ফলে অনেক সময় বহু কৃষকে অত্যাধিক পরিমানে রাজস্ব দিতে হত ।
(২) গ্রামীণ অর্থনৈতিক ভাঙ্গন ঃ- চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে অত্যাধিক ব্যাবস্থা ক্ষতি হতে থাকে ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথ রুদ্র হয় ।
(৩) মধ্য স্বত্ব ভোগীশ্রেনির উদ্ভব ঃ- অনেক জমিদার রাজস্ব ইজারা দেওয়ার ফলে ইজারাদার , দর ইজারা , পওনিদার ইত্যাদির মধ্যে মধ্য স্বত্বা ভোগী শ্রেণীর উদ্ভব ।
(৪) পুরাতন জমিদার শ্রেণীর পত্ন ঃ- চিরস্থায়ী  বন্দোবস্ত অনুসারে সূর্যাস্ত আইন অনুযায়ী জমিদারকে নিদিষ্ট দিনে রাজস্ব দিতে হত , কিন্তু দেখা যায়  ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পুরাতন জমিদার শতকরা ৪০ ভাগ জমিদার তাদের জমিদারী হারায় ।
(৫)  কৃষকের দুরাবস্থাঃ- জমিদাররা কৃষকদের ওপর প্রবল অত্যাচার চালিয়ে নির্ধারিত রাজস্বের চেয়ে অনেক বেশি রাজস্ব আদায় করত। পরিসংখ্যান বলছে, ১৭৯৩ সালে জমিদাররা নির্ধারিত ৩৫ লক্ষ পাউন্ডের জায়গায় ১ কোটি ৩৫ পাউন্ড রাজস্ব আদায় করে। ফলে, কৃষকদের অবস্থা করুণ হয়ে ওঠে।


উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বিস্তারিত ভাবে জানলাম চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে । আশাকরছি আপনারা সুন্দর ভাবেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত সম্পর্কে জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন । লেখাটি ভালো লাগলে আবশ্যই শেয়ার করবেন এবং আপনাদের মতামত জানিয়ে জাবেন । ধন্যবাদ

  

1 comment: